লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুরে গ্রামীণ সড়ক, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ও ফসলী জমি বিনষ্টকারী ট্রাক্টর ট্রলি চলাচলে বাধা দিয়েছে এলাকাবাসী। এ কারণে একটি ইটভাটা মালিক কামাল উদ্দিন ইকবাল শ্রমিকদের দিয়ে বিক্ষোভ করিয়েছেন। এসময় শ্রমিকরা গাছের গুঁড়ি ফেলে ঘন্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে রাখে।

বুধবার (২৬ ফ্রেব্রুয়ারী) কাদিরাগোজা- টু-করাতির হাট সড়কে অবৈধ ট্রাক্টর চলাচল বন্ধে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগ দেয় স্থানীয় বাসিন্দা মোহসিন সরকার। এর আগে গতকাল
মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার কাদিরাগোজা থেকে করাতিরহাট সড়কে এলাকাবাসী ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ করে দিলে স্থানীয় সবুজের গোজা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে ওই ইটভাটার শ্রমিকরা। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কাদিরাগোজা-করাতিরহাট সড়কের আশপাশে কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে৷ এসব ভাটায় আশপাশের ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরি করা হয়। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে একাধিকবার জরিমানা করলেও তা বন্ধ হয়নি। ভাটাগুলোতে মাটি পরিবহণ করা হচ্ছে ট্রাক্টর ট্রলির মাধ্যমে। এ দানবীয় ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে ফসলী জমি ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট বিনষ্ট হচ্ছে। কাদিরাগোজা-করাতিরহাট সড়কের বিভিন্ন অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে। এনিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। উপজেলা প্রশাসন স্থানীয়দেরকে এসব ঘটনায় সচেতন ও ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার জন্য পরামর্শ দেয়।

এতে চররমনী মোহন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও একই ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আলী হোসেন সরকারসহ স্থানীয় লোকজন ট্রাক্টর চলাচলে বাধা দেয়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে মো. হৃদয় নামে এক চালক বাধা প্রদানকারী লোকজনকে ট্রাক্টর দিয়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে লোকজন হৃদয়কে মারধর করে। তবে ঘটনার সময় বিএনপি নেতা আলী ঘটনাস্থল ছিলেন না।

হৃদয় মেসার্স ইকবাল ব্রিকস ম্যানুফেকচারিংয়ের ট্রাক্টর চালক ছিলেন। এতে ভাটা মালিক কামাল উদ্দিন ইকবাল বিএনপি নেতা আলীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে শ্রমিকদের দিয়ে বিক্ষোভ করান। একপর্যায়ে শ্রমিকরা গাছের গুড়ি ফেলে ঘন্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় সড়ক থেকে গাছের গুঁড়ি সরিয়ে দেওয়া হয়।

বিএনপি নেতা আলী হোসেন বলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা অবৈধ ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ করতে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য স্থানীয় লোকজন ট্রাক্টর বন্ধ করতে বলে। ট্রাক্টর চালক লোকজনকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এজন্য তারা চালককে মারধর করে। পরে ভাটা মালিক ইকবাল তার শ্রমিকদের দিয়ে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে রাখে। আমার বিরুদ্ধেও মিথ্যে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

ইটভাটা মালিক কামাল উদ্দিন ইকবাল বলেন, বিএনপি নেতা অযথা ট্রাক্টর চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। তাকে যদি ইউএনও নির্দেশই দেন তিনি আমাদের নিয়ে বসতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে লোকজন দিয়ে ট্রাক্টর চলাচলে বাঁধা দিচ্ছেন। কারণ জানতে চাইলে একজন চালককে আমার ভাটার সামনেই দুই দফা মারধর করা হয়৷ এনিয়ে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি সরাসরি আমার কাছে কোন চাঁদা দাবি করেননি। আর বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘটনায় আমি জড়িত নই।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা জানান, এলাকাবাসী ট্রাক্টর চলাচলে বাধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সদর থানাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।